আরও রক্তক্ষয়ের পথেই যাচ্ছে পাকিস্তান?

সব বাধা ভেঙে রাজধানীতে ঝড় তুলতে বদ্ধপরিকর উত্তেজিত জনতা। পথেই তাদের আটকে দেওয়ার জন্য মরিয়া আতঙ্কিত এক প্রশাসন। কয়েক দিন ধরে ইসলামাবাদ দৃশ্যত লকডাউনের মধ্যে রয়েছে। বড় বড় কনটেইনার ফেলে শহরে ঢোকার মূল পথ আটকে রাখা হয়েছে। পাঞ্জাবের বেশির ভাগ মোটরওয়ে ও হাইওয়ে রাখা হয়েছে বন্ধ করে।

তবু এসব চেষ্টা ব্যর্থ বলে মনে হচ্ছে। জনতা অবরোধ ভেঙে শহরে প্রবেশ করেছে। এক রাতের সহিংসতায় নিহত ও আহত হয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা। এরপর ডাকা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। পরিস্থিতি বেসামরিক প্রশাসনের হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেখামাত্র গুলি করার। পতন রোধ করার শেষ অবলম্বন হিসেবে দেখা হয় সেনা মোতায়েনকে।

বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনীকে ডাকার নজির এই প্রথম নয়। তবে রাজধানী এর আগে কখনো এমন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়াও হবে। সেনারাও নিশ্চয় উত্তেজিত জনতার মুখোমুখি হয়ে পিছু হটতে চাইবেন না। বিপজ্জনক এ পরিস্থিতিতে সেনা ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ বাধতে পারে। এরপর কী হবে? পাকিস্তানে তা সহজেই অনুমান করা যায়।

দেশ সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। পিটিআইয়ের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ও সেনা–সমর্থিত ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব দেশকে নৈরাজ্যের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি করছে।

গত 8 ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছিল। নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদে পিটিআইকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তার ওপর বানোয়াট অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও পিটিআইয়ের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের বন্দী করে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি দাহ্য হয়ে ছিল।

কিন্তু এখন যা ঘটছে, তাতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। পিটিআইয়ের অতীতে রাজধানীতে ঝড় তোলার জন্য বেশ কয়েকটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এই ফাইনাল কলের পর যে জনস্রোত নেমেছে, তার তীব্রতা ও হিংস্রতা দেখে অনেক সমর্থকও বিস্মিত হয়েছেন। প্রশাসন শক্তি ব্যবহার করেছে নৃশংসভাবে। সেনাও মোতায়েন হয়েছে। তবু পিটিআইয়ের এই চূড়ান্ত আক্রমণ কতটা ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

ইমরান খানের ২৪ নভেম্বরের প্রতিবাদের আহ্বান ছিল খুব হিসাব করা। ক্ষমতাসীন জোট সেনাবাহিনীর সমর্থনে সংবিধানে কিছু বিতর্কিত পরিবর্তন এনে বিচারিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। সুপ্রিম কোর্টকে কার্যনির্বাহী প্রশাসনের অংশে পরিণত করার চেষ্টাও বিরোধীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। আদালতও যদি পোষমানা হয়ে যান, তাহলে সেখান থেকেও কোনো সহায়তার আশা শেষ।

বিনা বিচারে বিরোধীদলীয় নেতারা কারাগারে বন্দী। মূল অভিযোগেগুলো থেকে আদালত জামিন দিলেও সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নতুন মামলা দায়ের করেছে। সমর্থকেরা আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ইমরান খানের ‘ফাইনাল কল’ শুধু দলের সমর্থকদেরই নয়, সেনাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে অসন্তুষ্ট অন্যদেরও উৎসাহিত করেছে।

অনেক ভুলভাল জনতুষ্টিবাদী বক্তব্য সত্ত্বেও কারাবন্দী ইমরান নিঃসন্দেহে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা। সম্ভবত দেশের ইতিহাসে আর কোনো রাজনৈতিক নেতা শ্রেণি–পেশার ব্যবধান কাটিয়ে এত ব্যাপক সমর্থন পাননি। গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দলটিকে নিজের প্রতীক থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমনকি প্রচারণা চালানোর অনুমতিও দেওয়া হয়নি। পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীদের চিনতে পর্যন্ত পারেনি জনগণ। তবু তাঁদের ভোট দিয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। অনেকে একে বলেছেন ব্যালট–বিপ্লব।

এরপর ব্যাপক কারসাজি করে ইমরানের পিটিআইকে ক্ষমতার বাইরে রাখা হয়। এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যার বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। এ সপ্তাহে বিক্ষোভকারীদের বিশাল জনসমাগম দেখে ইমরান খানের সমর্থনের ভিত্তির গভীরতা বোঝা যায়।

এই শাসক জোট ভঙ্গুর। এখন সময় তার নিজের শক্তি হিসাব করে দেখার। নৃশংস বলপ্রয়োগে আন্দোলন দমন করার যেকোনো পদক্ষেপ সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক পরিণতি বয়ে আনবে। কিছু ফেডারেল মন্ত্রীদের সাহসিকতার পেছনে আছে আতঙ্ক। এমনকি মাথার ওপরে থাকা ক্ষমতার মালিকদের সমর্থনও সরকারের সন্দেহজনক বৈধতাকে বাঁচাতে পারে না।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। সেনারা ইতিমধ্যেই খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করছেন।

পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই রাজধানী থেকে নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহার করা জরুরি। সবচেয়ে বড় কথা, রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট সমাধান করতে দেওয়া উচিত। বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার দায়িত্ব মূলত সরকারের। সরকারকে বুঝতে হবে যে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা যায় না। জনগণের শক্তির বিরুদ্ধে কে দাঁড়াতে পারে?

Ctg News 24

Recent Posts

আইনজীবী আলিফ হত্যা: দুই আসামি রিমান্ডে

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার মামলায় প্রধান আসামি চন্দন দাস এবং অপর…

2 weeks ago

ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ

শান্তি–সম্প্রীতির প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ রাজনীতিকদের পর ধর্মীয় নেতারাও দেশে শান্তি, সম্প্রীতি এবং স্বাধীন অস্তিত্ব ও…

2 weeks ago

ভয়মুক্ত নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভয়মুক্ত এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার কথা বলেছেন,…

2 weeks ago

স্ত্রী হত্যা মামলায় জামিনে মুক্ত সাবেক এসপি বাবুল আক্তার

তিন বছর সাত মাস পর স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক…

3 weeks ago

চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষ, হত্যা

২৯ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর মামলা চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন না…

3 weeks ago

চট্টগ্রামে ১০ সরকারি স্কুল

এক আসনের বিপরীতে ৬২টি আবেদন চট্টগ্রামে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি আবেদন…

3 weeks ago