চট্টগ্রাম থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে স্থান পাওয়া দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের কর্মী। তারা হলেন-নতুন কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে স্থান পাওয়া ড. হাছান মাহমুদ ও ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
এবার পদোন্নতি পাওয়া হাছান মাহমুদ আগের কমিটিতে ৩ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আমিনুল ইসলাম উপ প্রচার সম্পাদক ছিলেন।
চট্টগ্রাম শহরের জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগে দায়িত্ব পালনের সময় থেকে আ জ ম নাছিরের সাথে রাজনৈতিক সংশ্রব হাছান মাহমুদের। আ জ ম নাছির উদ্দীন যখন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাছান মাহমুদ তখন হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এরপর আ জ ম নাছির যখন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, তখন হাছান মাহমুদ শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক। দুঃসময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালেও আ জ ম নাছিরের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা পেয়েছেন হাছান মাহমুদ। বিষয়গুলো হাছান মাহমুদ স্বীকার করেন অকাতরে। বলেন, ‘নাছির ভাই আমার নেতা। তার হাত ধরেই চট্টগ্রামে রাজনীতি করেছি। বন্ধুর পথ অতিক্রম করেছি।’
এদিকে, ১৯৮০ সালে দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের ঘাটফরহাদবেগ ইউনিট থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করা আমিনুল ইসলাম পরবর্তীতে দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও সম্পাদকীয় পদে অধিষ্ঠিত হন। আ জ ম নাছির উদ্দীনই প্রথম তাকে ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিতে তুলে এনেছিলেন, দিয়েছিলেন সদস্যপদ। ভালো বক্তৃতা, সুন্দর হস্তাক্ষর সর্বোপরি দেয়াল লিখন ও অনিন্দ্য সুন্দর হস্তাক্ষরে চিকা মারাই ছিল রাজনীতিতে আমিনের উঠে আসার অন্যতম যোগ্যতা।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে গিয়ে আমিনের রাজনীতির পরিধি বিস্তৃত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি থেকে পর পর চারবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে প্রথমে সদস্য, তারপর সম্পাদজ মণ্ডলীর সদস্য, সহ সভাপতি ও সর্বশেষ সিনিয়র সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেই আমিনুল ইসলাম ১৪ বছর ধরে আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দুদুবার সদস্য, দুবার উপ প্রচার সম্পাদক হয়ে। সর্বশেষ দায়িত্ব পেলেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের।
পদপদবীতে এত উপরে অবস্থান করার পরও অকপটে তিনি স্বীকার করেন আজকের পর্যায়ে উঠে আসতে অগ্রজদের অবদান। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আ জ ম নাছিরের অবদানের কথা স্বীকার করেন তিনি।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আ জ ম নাছির উদ্দীনকে নিজের রাজনৈতিক গুরু, রাজনৈতিক সিঁড়ি বলে মন্তব্য করেন আমিনুল ইসলাম।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নাছির ভাইয়ের সহযোগিতা না পেলে আজকে হয়তো আমি এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না। নাছির ভাই আমার ডাইরেক্ট নেতা। আমার রাজনীতির জীবনে প্রথম যে সিঁড়ি ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর; আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সদস্য হয়েছিলাম। যখন আমার বয়স মাত্র ১৭ বছর। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে আমার নামটি তখন ঘোষণা করেছিলেন নাছির ভাই নিজেই। সেই পথ ধরে আজ আমি আজকের অবস্থানে।
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আছে, ‘৭৫ পরবর্তী সময় থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাত ধরে অনেক নেতা সৃষ্টি হয়েছেন। এজন্য তাকে নেতা বানানোর কারিগর বা কারখানাও বলা হয়ে থাকে।
শুধু আমিনুল ইসলামই নন, জাতীয় রাজনীতির অনেক পরিচিত মুখ, মন্ত্রী-এমপি, সরকারি আমলা, চিকিৎসক নেতা অনেকেই তার হাত ধরে রাজনীতি করে সফলতার শীর্ষে উঠেছেন।-এমন আলোচনা আছে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে।
এছাড়া ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারি, মহেশখালীর সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার রামুর সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন নাসিমসহ অনেকেই আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাতেগড়া কর্মী।
ড. হাছান মাহমুদ ও আমিনুল ইসলাম প্রসঙ্গে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা একসাথে রাজনীতি করেছি, রাজনীতির কঠিন সময়গুলো পার করেছি। আজ তারা মস্তবড় নেতা। আমি মনে করি এটি তাদেরই কৃতিত্ব। আজকের পর্যায়ে আসতে তারা অনেক পরিশ্রম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তারা আমাদের গর্ব। আগামিতে তাদের হাত ধরেই রচিত হবে রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল সূচনা।’