চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে আজ বুধবার নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ হয়। এসব কর্মসূচি থেকে সাইফুল ইসলামকে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বানও জানানো হয়েছে এসব কর্মসূচি থেকে।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে চট্টগ্রাম আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় গতকাল মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান চিন্ময়ের অনুসারীরা। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রাম নগর
আজ বিকেলে নগরের বহদ্দারহাট মোড় থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে মিছিল শুরু করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম নগর শাখা। আইনজীবী সাইফুল হত্যা এবং গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিলটি বের করা হয়। নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে এসে শেষ হয় মিছিলটি। পরে সেখানে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ পালন উপলক্ষে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত না শুকাতেই একটি স্বার্থান্বেষী চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। ভারতীয় ছকে কালো পতাকা উড়িয়ে এ দেশকে জঙ্গিবাদ প্রমাণিত করার চেষ্টা করেছে চক্রটি। তারই ধারাবাহিকতায় ইসকনের জঙ্গিবাদীদের সহযোগিতায় এক দল লোক সাইফুল ইসলামকে হত্যা করেছে। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক ওসামা রাইয়ান। আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম নগর (উত্তর) সভাপতি ফখরুল ইসলাম, নগর (দক্ষিণ) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নাহিদুল ইসলাম। বক্তারা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা না হলে এ সরকার কাজ করতে পারবে না; সাম্য ও ঐক্যের দেশ হবে না। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের মদদে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন হয়। ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ঐক্য’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মহল এবং বিদেশি চক্র বারবার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ফুয়াদ হাসানের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আতিয়ার রহমান, ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ পাটওয়ারী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল হক প্রমুখ।
এদিকে বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট–সংলগ্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের গায়েবানা জানাজা হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাকিব মাহমুদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান প্রমুখ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সাইফুল ইসলামকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে তাঁরা মিছিল করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মিছিলটি শহীদ মিনারে শেষ হয়েছে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, একটি পক্ষ দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায়। তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়েটের সমন্বয়ক মাহফুজার রহমান মোহাব্বত বলেন, ‘যারা দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায়, দেশের ছাত্র-জনতা তাদের অস্তিত্ব রাখবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই, অবিলম্বে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
চুয়েটের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতফান বিন নূর বলেন, যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত, দ্রুত সময়ে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি যারা নষ্ট করতে চায়, তারা ব্যর্থ হবে।
বাম গণতান্ত্রিক জোট
সাইফুল ইসলামের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জোটের নেতারা। আজ এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় বাম গণতান্ত্রিক জোট।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জোটের নেতারা বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনার সূত্র ধরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন তাঁরা। এই হত্যাকাণ্ডের সব দিক তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সব রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সভা আয়োজনের আহ্বান জানান জোট নেতারা। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের চট্টগ্রাম জেলার পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) জেলা সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির আবিদ, পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও সিপিবি জেলা সভাপতি অশোক সাহা, বাসদ জেলা কমিটির ইনচার্জ আল কাদেরি।
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার মামলায় প্রধান আসামি চন্দন দাস এবং অপর…
শান্তি–সম্প্রীতির প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ রাজনীতিকদের পর ধর্মীয় নেতারাও দেশে শান্তি, সম্প্রীতি এবং স্বাধীন অস্তিত্ব ও…
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভয়মুক্ত এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার কথা বলেছেন,…
তিন বছর সাত মাস পর স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক…
২৯ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর মামলা চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন না…
এক আসনের বিপরীতে ৬২টি আবেদন চট্টগ্রামে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি আবেদন…