ফয়’সলেকের আবাসিক হোটেলে মধু চক্রের রমরমা ব্যবসা, সাংবাদকর্মীদের উপর হামলা

|| CTG News 24 (CN24)  ctgnews24 Desk

বন্দর নগরীর চট্টগ্রামের স্বনামধন্য পর্যটন স্পট ফয়’স লেক এলাকার আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোতে চলছে অবাধে দেহ ব্যবসা ও অনৈতিক সম্পর্কের মিলন মেলা। অভিযোগ রয়েছে, খুলশী থানাধীন এলাকার বেশ কিছু হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ নিয়ম নীতির বাইরে। সেখানে আগত অতিথিদের নানা রকম অবৈধ এবং অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকে। এই এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোর মাঝে মোটেল সিক্স স্বর্ণালীসহ বেশ কিছু হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে যার বেশকিছু চমকে দেয়ার মতো তথ্য আসে হাতে।

অনুসন্ধানে জামা যায়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক যুগল, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধসহ যে কোন বয়সের যে কেউ খুব সহজে এখানে একান্তে সময় পার করতে পারে। এই সুবিধা নিতে কারোরই নুন্যতম তথ্য যাচাইকরণ ছাড়াই চড়া মূল্যে একান্তে সময় কাটানোর জন্য ঘন্টা অনুযায়ী ও সারা রাতের জন্য দেয়া হয় রুম ভাড়া। এছাড়াও সুযোগ বুঝে আবাসিক হোটেলে রুম নেয়া বিশেষ অতিথি ও দর্শনার্থীদের চাহিদামত জোগাড় করে দেয়া হয় মনোরঞ্জনের খোরাক মধু কন্যাদের। সূত্রে আরো জানা যায়, মধু চক্রের সাথে রুম ভাড়া নিয়ে নির্ভয়ে মাদক সেবনের আস্থাশীল জায়গায় পরিনত হয়েছে ফয়’স লেকের এই হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলো। এতো সব অনৈতিক আয়োজনের কর্মকান্ড নির্বিঘ্নে করার সুযোগ করে দেয় এই হোটেলের দায়িত্বরত হোটেল বয় থেকে ম্যানেজার ও মালিক পক্ষের লোক পরিচয়দানকারী’রা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে, ফয়’স লেক-এ বেড়াতে আসা বিবাহিত এক যুগল অভিযোগ করে জানান, আমরা প্রায় সময় ফয়’স লেক বেড়াতে আসি পরিবার পরিজন নিয়ে। এখানে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। পুলিশী ঝামেলা নেই মর্মে ও সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে হোটেলে উঠার জন্য ইশারা ইঙ্গিতে খোলামেলাভাবে বলতে থাকে এখানকার হোটেলের দালাল’রা। এমন অস্বস্তিকর প্রস্তাবের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার নগরীর খুলশী থানাধীন ফয়’স লেক এলাকায় অবস্থিত মোটেল সিক্স স্বর্ণালী’তে কাস্টমার সেজে গেলে সেখানে দেখা যায়, ফ্রন্ট ডেস্কের দায়িত্বে থাকা লোকজন হোটেলে আগত যুগলদের পূর্নাঙ্গ তথ্য বিবরণী না নিয়ে খুব দ্রুত একটি ফরম পূরণ করে তাদের কন্ট্রাক্ট করা রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এসময় নিরাপত্তা জনিত কারণে যুগলদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং তারা বিবাহিত কিনা বা তারা কোন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে সেখানে একান্তে সময় কাটাতে এসেছেন এমন নূন্যতম প্রশ্নও তাদের করা হয়না হোটেলের পক্ষ থেকে। প্রতিটি যুগল’র তথ্য বিবরনীতে (এন্ট্রি ফরম) মিথ্যা তথ্য ও অসংগতি দৃষ্টিগোচর হয়। হোটেলটিতে বেশিরভাগ যুগল বোর্ডারের সঠিকভাবে পরিচয় যাচাই না করে, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা অফিসিয়াল আইডেন্টিফিকেশনের কপি ছাড়াই স্বল্প সময়ের জন্য একান্তে সময় কাটানোর জন্য রুম ভাড়া দেয়া হয়। এমনকি হোটেল রিসিপশনে প্রতিবেদক দাড়িয়ে থাকা অবস্থায়ও প্রতিবেদকদের সামনেই তিন জোড়া অবিবাহিত তরুণ-তরুণীকে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টার জন্য রুম ভাড়া দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০-৬০ জন যুগল এভাবে একান্তে সময় কাটাতে আসেন মোটেল সিক্স স্বর্ণালী’তে। সূত্রে জানা যায়, এই মোটেলে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাচেলর খদ্দেরদের জন্য আলাদা করে স্মার্ট সুন্দরী পতিতাও রাখা হয়।

এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে কর্মচারীরা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। অত:পর সে সময় মোটেলে অবস্থানরত বোর্ডারদের সাথে ফ্রন্ট ডেস্কে থাকা তথ্যের মিল আছে কি না জানতে চাইলে আনোয়ার নামের এক ব্যক্তি নিজেকে মালিকপক্ষের একজন শেয়ার হোল্ডার দাবি করে প্রতিবেদকদের গরম মেজাজে চোখ রাঙ্গিয়ে বলেন এখানে এমন কিছু নেই এবং নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত তথ্য দিবে বলে কৌশলে তাদের হোটেলের নীচতলার একটি আলাদা অফিস কক্ষে নিয়ে গিয়ে তথ্য দেয়া শুরুর এক পর্যায়ে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বীকার করেন তাদের সকল অপকর্মের কথা। এসময় তিনি দাবী করেন ফয়’স লেক এলাকার কম-বেশি সবগুলো আবাসিক হোটেলেই একই প্রক্রিয়ায় একান্তে সময় কাটাতে স্বল্প সময়ের জন্য অবিবাহিত তরুণ-তরুণী এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের রুম ভাড়া দেয়া হয়। এমনকি ফয়’স লেক এলাকার বেশ কিছু হোটেল সরাসরি পতিতা ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানান আনোয়ার। কথা প্রসঙ্গে জোর গলায় দাবী করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে শখ্যতা বজায় রেখেই তারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রসঙ্গ ক্রমে তিনি চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় অনলাইন পোর্টালের সংবাদকর্মীর রেফারেন্স দিয়ে হুংকার তোলেন তাকে তার বন্ধু পরিচয় দিয়ে। পরে সেই অনলাইন সাংবাদিক’কে ফোন করতে বলার পর আনোয়ার তাকে ফোন না দেয়ায়, এই বিষয়ে বন্ধু পরিচয় দেয়া সেই সাংবাদিক’কে ফোন করা হলে তিনি আনোয়ার নামে কাউকে চিনেন না বলে অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন। প্রথমে বন্ধু পরিচয় দিলেও, পরে তাকে বড় ভাই পরিচয় দেয় আনোয়ার। তথ্য যাচাইয়ের পালাক্রমে পুলিশ ও সেই অনলাইন সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে হুংকার দেয়া উত্তেজিত বাঘ আনোয়ার শেষে বিড়ালে পরিনত হয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়। সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে টাকা দেয়ার জন্য জোরাজোরি শুরু করলে সরাসরি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসা হয় সেখান থেকে। তথ্য ও অনুসন্ধান চলাকালীন সকল প্রকার কথপোকথন ও অনলাইন সাংবাদিকের নামে ভয় দেখানো সহ অনৈতিক প্রস্তাবের সকল প্রমাণাদি সংরক্ষিত আছে  অনুসন্ধানী টিমের কাছে।

Ctg News 24

Recent Posts

আইনজীবী আলিফ হত্যা: দুই আসামি রিমান্ডে

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার মামলায় প্রধান আসামি চন্দন দাস এবং অপর…

2 weeks ago

ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ

শান্তি–সম্প্রীতির প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ রাজনীতিকদের পর ধর্মীয় নেতারাও দেশে শান্তি, সম্প্রীতি এবং স্বাধীন অস্তিত্ব ও…

3 weeks ago

ভয়মুক্ত নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভয়মুক্ত এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার কথা বলেছেন,…

3 weeks ago

স্ত্রী হত্যা মামলায় জামিনে মুক্ত সাবেক এসপি বাবুল আক্তার

তিন বছর সাত মাস পর স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক…

3 weeks ago

চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষ, হত্যা

২৯ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর মামলা চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন না…

3 weeks ago

চট্টগ্রামে ১০ সরকারি স্কুল

এক আসনের বিপরীতে ৬২টি আবেদন চট্টগ্রামে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি আবেদন…

3 weeks ago