অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভয়মুক্ত এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার কথা বলেছেন, যেখানে জনগণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলছি। আমরা সবাই একমত যে আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি আছে। আমি সম্প্রীতির সঙ্গে একটি জিনিস যোগ করতে চাই, সেটা হলো ভয়। সম্প্রীতির পাশাপাশি আমাদের মনে ভয়ও রয়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ভয়ে ভীত নাগরিক নই। আমরা নির্ভীক নাগরিক। এমন পরিবেশ তৈরি করা হবে, যাতে মানুষের মধ্যে কোনো ভয় না থাকে।’ তিনি এমন এক বাংলাদেশ গড়ার ওপর জোর দেন, যেখানে একজন নাগরিক অন্য নাগরিককে ভয় পাবেন না।
প্রধান উপদেষ্টা ক্রোধ ও ভয় থেকে মুক্ত হয়ে একটি সহনশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন, যেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বা এমন কোনো ঘটনা ঘটলেও তা সমাধান করা যাবে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা যদি এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে পারি, তাহলে এটি একটি সফল দেশ হবে। আমরা এর জন্য অপেক্ষা করছি। আল্লাহ আমাদের এমন একটি স্বপ্ন দেখার এবং তাতে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি এবং এটা সম্ভব।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে; কিন্তু কোনো ঘটনা ঘটলে জনগণকে তা ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে। এটি প্রশমিত করা উচিত। আমাদের অবশ্যই ক্ষোভ প্রশমিত করতে হবে, যাতে এটি আবার অন্য ঘটনার কারণ না ঘটায়।’
সরকারপ্রধান বলেন, দেশের জনগণ একটি রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে; কিন্তু তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে নেই; বরং তারা দেশ-বিদেশে উসকানি দিচ্ছে। এসব উসকানিতে সাড়া না দিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
দেশের বাইরের কারণেও উসকানি তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জনগণ যাতে এর শিকার না হয়, সে জন্য কীভাবে উসকানি মোকাবিলা করতে হয় তা তাদের শিখতে হবে। তিনি বলেন, উসকানির কারণে বাংলাদেশ বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে—ব্যক্তিগতভাবে নয়, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এটি মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগে বৈঠকে দেওয়া সূচনা বক্তব্যে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো হামলা হলে সঠিক তথ্য সংগ্রহে ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘তথ্য সরবরাহকারীরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য কীভাবে নিরাপদে তথ্য সংগ্রহ করা যায়, তা জানতে এই সংলাপে আসার আহ্বান জানিয়েছি।’
এ সময় সরকারপ্রধান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি উঠেছিল, যা আমাকে দুঃখ দিয়েছে।’ তিনি বলেন, এখন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি আবারও উঠে এসেছে এবং বিদেশি গণমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে। বাস্তবতা ও বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মধ্যে তথ্যের ফারাক রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক এ ধরনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এ ধরনের ঘটনা রোধে একটি পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক প্রতিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।